
ছবি: সংগৃহীত
ছোটবেলা থেকেই কিছু ঘুষখোরদের চিনতাম। ধরুন; বিদ্যুৎ বিভাগের মিটার রিডার, সেও লাখপতি। টিএন্ডটিতে ছোটখাট কাজ করে, সেও লাখপতি। অথচ এদের বেতন তখন ছিল মাত্র কয়েক হাজার টাকা। কিন্তু এদের হাবভাব ছিল আলাদা কিসিমের। সঙ্গে এদের পরিবারের সদস্যদের ভাবও ছিল দেখার মতো। চুরি বা ঘুষের টাকায় ভাব বাহাদুরি তখনও ছিল। তবে তখন চোরদের সংখ্যা ছিল কম আর চোরেরাও এখনকার মত হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করত না বোধ হয়। তখনকার আর এখনকার এইসব চোরেরা মূলত সরকারি চাকুরে। সরকারি টাকা বা সম্পদ চুরি করা মনে হয় আরামের। আমজনতার টাকা বলে সেটা হরিলুট করাও মনে হয় জায়েজ।
বলতে দ্বিধা নেই স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে চলেছে বৈ কমেনি। আর দিনেদিনে রাজনৈতিক নানারকম অসাধুতা নির্বিঘেœ সমস্ত সরকারি অফিস আদালতে মহামারী হয়ে ছড়িয়ে গেছে দেশময়। না হলে সরকারি অফিসের ড্রাইভার, দারোয়ান, পিয়নরাও কি করে কোটিপতি হয়! মাথা থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত ঘুষ চাঁদাবাজি আর পার্সেন্টেজ খাওয়ার ধুম।
সরকারি অফিসের যে কর্মচারী বা কর্তা যত বড় চোর তার ভাব ও ক্ষমতা তত বেশি। এরা টাকা দিয়ে মানুষের কদর কিংবা আদর কিনে ফেলে। মানুষও আজকাল এদের নিয়ে আদিখ্যেতা বেশি করে। ভালো চেয়ারটা এগিয়ে দেয়, প্রধান অতিথি করে, বড় মাছটা পাতে দেয়, এমন কি চোরগুলি সালাম বা করতালিও পায় বেশি। সৎ মানুষের কদর আজ কমে গেছে। সৎ মানুষের যেন আকাল। সৎ চাকুরে যারা, তাদের উল্টো গালাগাল শুনতে হয়। এরা বেক্কল, গাধা ইত্যাদি। না হলে এমন চাকরিতে থেকেও ওর গাড়ি বাড়ি নেই কেন? ওর ছেলে মেয়ের বিয়েতে আড়ম্বর নেই কেন?
কি আশ্চর্য, না! এমন করে চললে ক‘দিন বাদে সৎ মানুষের খোঁজে চিড়িয়াখানা বা জাদুঘরে যেতে হবে হয়তো। এভাবে বলছি কারণ সৎ মানুষ দিন দিন নির্বাসিত এবং নিখোঁজ হতে চলেছে।
যে মানুষটা ঘুষ খায়, নিত্যদিন চুরি-চামারি করে, মানুষকে ঠকিয়ে রাতারাতি ফুলে ফেঁপে ওঠে, তাকে তো আশেপাশের সবাই চেনে বা জানে। কিন্তু জেনেশুনেও তাকে নিয়েই লাফালাফি, নির্লজ্জের মত এদেরকেই তো তোষামোদ, সমাদর। কি অবাক কা-!
যেদিন আমরা এদের এদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব, এদেরকে ছি ছি বলব বা থু থু করবো, সেদিন থেকে দিন দিন এদের সংখ্যা হয়তো কমতেও পারে।
বেনজির বা মতিউরের বউ-বাচ্চা আত্মীয়-স্বজনরা কি এসব বুঝতো না? এরা কি একদিনে এমন হয়েছে? এদের আশেপাশে যারা কাজ করত তারাও তো জানত এদের লোভ কিংবা অনিয়মের কথা। এরা তো দিবালোকেই এসব করত, নাকি না? অনেকে জেনেও আবার না জানার ভান করেছে শুধুমাত্র ভাগ পেত বলে।
এই বানরের পিঠা ভাগের গল্প আজ সর্বত্র। দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর আপনার যেই হোক তাকে ধিক্কার বা তিরস্কার জানাতে হবে, বয়কট করতে হবে, পরিহার করতে হবে তার সঙ্গ বা সংঘ। সে যে সমাজের কীট তা বোঝাতে হবে তাকে। কারণ সে আপনার আমার টাকা বা সম্পদ চুরি করছে কিংবা করেছে। তাই তাকে চোর বলুন, ঘুষখোর বলুন। নতুবা একসময় দেশটা, সমাজটা এই কীট পতঙ্গেরই হয়ে যাবে।
এই নরকের কীটগুলোকে শাস্তি দিন কি পিষে মারুন সেটা আপনাদের বিবেচনা। শুধু বলবো নিজেদের বিবেকের কাছে জিজ্ঞেস করুন আপনি কি করছেন বা করবেন। মনে রাখবেন এদের কিন্তু রুখতে হবে। নতুবা শেষটায় এরাই গিলে খাবে সব। আমরাই চলে যাব নির্বাসনে। কারণ এসব কীটপতঙ্গেরা গোটা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ কিলবিল করছে, গিজগিজ করছে- সুজলা সুফলা সোনার বাংলার সমস্ত শরীর জুড়ে!
লেখক:অভিনেতা।