ঢাকার চিঠির লেখক: মেসবাহ শিমুল
বুধবার দুপুরে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বাগানে বসেই নয়া পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনের পরিস্থিতি দেখছিলাম। কয়েকটি ফেসবুকে পেজে লাইভ স্ট্রিমিং হচ্ছিল। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে এ ধরণের পরিস্থিতিতে স্পটে যেতে মুখিয়ে থাকি। কিছুক্ষণের মধ্যে ডিআরইউর বাগান থেকে বের হলাম। বিজয়নগর পানির ট্যাংকি আসতেই অন্যরকম চেহারা দেখছি। রাস্তায় কোনো যানবাহন নেই। পায়ে হেটে মানুষগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছুটছে। মোড় অবরোধ করে বেশকিছু বিএনপি কর্মী বিক্ষোভ করছে। হেটে হেটে নয়া পল্টন যেতে যেতে উৎকণ্ঠিত মানুষের দেখা পেলাম। দীর্ঘদিন পর মানুষের মধ্যে এমন রাজনৈতিক উৎকণ্ঠা দেখছি। সামনে বিএনপি অফিস ঘিরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। সংবাদকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে রয়েছে।
নাইটেংগেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত পুলিশের টহল গাড়ি ছুটছে। পুরো রাস্তায় ভাঙা ইট, কাঠের টুকরো পড়ে আছে। মাঝে মাঝে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ছে। অলিগলিগুলোয় তখনো বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলো।
সন্ধ্যার দিকে পল্টন মডেল থানার দিক দিয়ে ফকিরাপুল যাওয়ার পথে দেখলাম একদল লোক জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে পুলিশের দিকে এগিয়ে আসছে। তারা বলছে, ‘পুলিশ তোমার ভয় নাই-রাজপথ ছাড়ি নাই’। তারা সবাই হেলমেট পরা, হাতে দেশীয় অস্ত্র। তারপর তারা জোনাকি টাওয়ারের পাশে গলি দিয়ে বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া করে। এরপরের দৃশ্য দেখা হয় নাই।
বিশ্বকাপ ফুটবলের বিরতিতে খেলার মাঠ গরম করে রেখেছিলো মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট। ভারতের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য সিরিজ জয়ের আনন্দ যখন আমাদের ভাগাভাগি করার কথা তখন অনেকেই হঠাৎ এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি বলতে আমাদের উদ্বিগ্ন হতে হয়। কেননা একটি দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যদি এখন এই ধরণের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে তাহলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের জন্য না জানি কী অপেক্ষা করছে।
বৃহস্পতিবারও সারাদিনও নয়া পল্টনে বিএনপির অফিস অবরুদ্ধ ছিলো। পুলিশ দলটির মহাসচিবকেও ঢুকতে দেয়নি। এর আগে দলটির অনেক প্রভাবশালী নেতাদেরও আটক করেছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ২৩ জনের ২ দিনের রিমান্ড হয়েছে। পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছে। তার স্ত্রী আর বাচ্চা মেয়েটির আহাজারি সহ্য করার মতো না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসব দেখছি আর ভাবছি হায়রে রাজনীতি। হায়রে আমার সোনার বাংলাদেশ, হায়রে ক্ষমতা!
সন্ধ্যার পরে খিলগাঁওয়ের দিকে হেঁটে হেঁটে আসছি। পুরো রাস্তায় তেমন গণপরিবহন নেই। অফিস ছুটির এই সময়ে এমনিতেই মানুষের বাসায় ফেরার তাগিদ থাকে। কে কার আগে বাসায় ফিরবে এই প্রতিযোগিতায় নামি আমরা। তারমধ্যে যদি এই ধরণের যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তবে নাগরিকদের মধ্যে সেই প্রতিযোগিতা আরো বেড়ে যায়। রাজারবাগ-খিলগাওয়া মোড় পার হচ্ছি। মোটর সাইকেলে দুজন পুলিশ সদস্য রিকশার ফাঁকে প্রায় আটকে আছে। আমার মতো হাটতে থাকা এক যুবক বলছে- হায়রে দ্যাশ, সারাদিন পর অফিস শেষ কইরা এহন হাইট্ট্যা যাওয়া লাগে। এর বিচার কে করবো’।
জানিনা ওই যুবক কথাগুলো পুলিশ সদস্যকে শুনিয়ে বলেছে কি না। যদি বলেও থাকে তাতে লাভ কী? সরকারের হুকুমের যে গোলাম রাষ্ট্রের নাগরিকদের ভালোমন্দের বিচারে তার ক্ষমতাই বা কতটুকু?
লেখক: ঢাকা অফিস প্রধান।