শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

প্রসঙ্গ: ১০ ডিসেম্বর

মেসবাহ শিমুল,

আপডেট: ১২:৫২, ২ ডিসেম্বর ২০২২

প্রসঙ্গ: ১০ ডিসেম্বর

ঢাকার চিঠির লেখক: মেসবাহ শিমুল

ব্যক্তিগত জীবনে একটা পরাজয়ের পর এই লেখাটা লিখছি। ঢাকার একজন সংবাদকর্মী হিসেবে পেশাদার সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির একটি সম্পাদকীয় পদে নির্বাচন করেছিলাম। অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছি। সেই থেকে মনের সম্পূর্ণটা জুড়ে বিষাদের কালো ছাঁয়া। পরাজয়ের সেই গ্লানি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। তবে এই ভেবে ভালো লাগছে যে একটি স্বচ্ছ ও প্রশ্নাতীত ভোট প্রক্রিয়ায় হেরেছি। কোনো প্রকার পেশিশক্তি কিংবা কারচুপি ছিলো না। সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টার মধ্যেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। একটি বিতর্কমুক্ত ভোটে অংশ নিয়ে প্রায় ৬শত লোকের ভোট পেয়ে নিজেকে অবশ্য ভাগ্যবানও মনে হয়েছে। তারপরও পরাজয় তো পরাজয়ই। ইতিহাস কেবল বিজয়ীদেরই মনে রাখে। 

দেশের রাজনীতিতে এখন গরম হাওয়া বইছে। দেশের আবহাওয়া মোটামুটি শীতার্ত হলেও রাজনীতির এই গরম বাতাস ধীরে ধীরে দেশের সবখানে ছড়িয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে ছড়ানো উত্তাপ আমরা দেখতে পাচ্ছি। আগামীকাল শনিবার রাজশাহীতে দলটির গণসমাবেশ। সবশেষে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচীর শেষ হবে। 

ইতোমধ্যে ১০ ডিসেম্বর নিয়ে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের নানা কথাবার্তা দেখছি। বিএনপিকে পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতিসহ নানা কথা বলা হচ্ছে। সেটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতেও পুলিশের মধ্য থেকে বলা হচ্ছে। যদিও বিএনপি বলছে তারা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে ছাড়া অন্য কোথাও এ সমাবেশ করার কথা ভাবছেই না। এমন একটি অমিমাংসিত বিষয় নিয়েই দিন এগিয়ে যাচ্ছে ১০ ডিসেম্বরের দিকে। 

বিএনপি নেতারা বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের কথা বলে আসছেন। র‌্যাব-পুলিশের ওপর সেই চাপ আরো আসতে পারে এমন কথাও বলছেন তারা। এই চাপ যদি সত্যিই নতুন করে আবার আসে তবে প্রেক্ষাপট বদলেও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতিতেও আসতে পারে বড় ধরণের পরিবর্তন। যার প্রভাব গড়াতে পারে আগামী নির্বাচনেও। 

প্রায় সব মহল থেকেই বলাবলি হচ্ছে আগামী নির্বাচন বিগত দুটি নির্বাচনের চেয়ে কিছুটা হলেও ভিন্ন হবে। এমনকি কেউ কেউ বলছেন আগামী নির্বাচন হবে ঠিকই তবে তার আগে একটি ভিন্ন ফরমেটের সরকার গঠিত হবার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। যারা মূলত দেশের আমূল পরিবর্তনের একটি গাইড লাইন দিয়ে যাবেন। কেননা এই মহলটির মতে, টানা দেড় দশক ধরে দেশে একটি রাজনৈতিক দলের যে একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজ করছে সেটি দেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র, অর্থনীতিকে বিপথে নিয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে এখনই বের হওয়া না গেলে দেশের কপালে ঘোর অন্ধকার অপেক্ষমান। তাই একটি সংস্কারের ভীষণ দরকার। 

এই সংস্কার কি কারণে? ভোটের জন্য। বিগত দুটি নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার যেভাবে হরণ করা হয়েছে তাতে এই সংস্কার নাকি আশু প্রয়োজন। সে কারনে সংস্কারক যেই হোক তাতে কিছু যায় আসে না। রাজনীতির এই আলোচনা যখন তুঙ্গে তখন তাতে কিছুটা হলেও ছন্দপতন ঘটিয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল। আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। জনগণ বিশেষ করে তরুণ-যুবাদের চোখে এখন কেবলই গোল বলেও যুদ্ধ। 

ভোট কিংবা বল, যুদ্ধ তো যুদ্ধই। দিন শেষে সবাই চায় জয়ী হতে। তবে সেই জয় যদি ফুটবল মাঠে লাখো কোটি দর্শককে সামনে রেখে হয় সেটি নি:সন্দেহে আনন্দ ও গৌরবের। আর যদি চুরি, ডাকাতি কিংবা অপকৌশল করে জয়ী হয় তবে সে জয়ে হয়তো ক্ষমতাবান হওয়া যায় কিন্তু গৌরব আসে না। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিশ্চয়ই বিরোধীদের দমন করা যায় কিন্তু তাতে স্বস্তির সুযোগ নেই। 

বিএনপি বলছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সরকার ক্ষমতায় তারা জনগণের ভোট চুরি করে এসেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে এখন রেফারিগিরি চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। দেশের জনগণ প্রতিবাদ করতে মাঠে নেমে এসেছে। এই অবস্থায় অতীতের ধারাবাহিকতা অর্থাৎ তৃতীয় মেয়াদে ভোট চুরির ঝুঁকি নিতে যাবে না তারা। আর যদি ঝুঁকি নিয়েও নেয় তবে সেটি হতে আত্মঘাতি। এই আত্মঘাতের আওয়ামী লীগকে এবার আর কেউ ছেড়ে দেবে না। না দেশের সাধারণ মানুষ না বর্হিবিশ্ব। 

প্রশ্ন জাগে, ভোটে হেরে যাওয়ার চেয়ে এভাবে অপভোটের কাছে হেরে যাওয়া খুবই পীড়াদায়ক। বিএনপি কিংবা বিরোধী নেতারা এই ১৫টি বছর কীভাবে সেই পীড়া সইলেন? এতো ধৈর্য্য আমাদের দেশের রাজনীতিকদের! 

লেখক: ঢাকা অফিস প্রধান।     
   

শেয়ার করুন: