বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

রাষ্ট্রের ভেতর সরকারের লোক বেশি 

মেসবাহ শিমুল

প্রকাশিত: ০০:২৩, ২৩ অক্টোবর ২০২২

রাষ্ট্রের ভেতর সরকারের লোক বেশি 

ফাইল ছবি

প্রায় বছর পাঁচেক আগের কথা। সন্ধ্যার পরে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সম্ভবত পরদিন সকালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। শহরে লোক গিজগিজ করছে। এর মধ্যে নারী-পুরুষের সমন্বিত একটি দল আমাদের কাছে এসে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইলো। আমার সঙ্গে ঢাকার একজন সাংবাদিক ছিলেন। তারা নিজেদের বিএল কলেজের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিলেন। আমি বললাম, ‘আপনারতো রাষ্ট্রের সম্পদ। কোনো নির্দিষ্ট দলের নয়। এভাবে কোনো প্রার্থীর পক্ষে কেন নামলেন?’ তারা কিছুটা রাগ করে কি যেন বলে চলে গেলেন। বিষয়টি আজ আর মনে নেই। 

ঘটনাটা অনেকদিন পর মনে পড়লো। মনে পড়ার কারন হলো সেই খুলনা শহরে দুই দিন গণপরিবহন বন্ধ। বাস মালিক সমিতি ঘোষণা দিয়ে সেটি বন্ধ রেখেছে। কেন সেটি হয়তো অনেকেই জানেন। তবুও একটু বলছি। দলীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বিভাগীয় এ শহরে সমাবেশ করছে বিএনপি। সে কারনে পরিবহন মালিকদের এমন উদ্যোগ। স্বপ্রণোদিত হয়ে করেছে। উদ্দেশ্য যেন বিএনপির সমাবেশে লোক সমাগম বেশি না হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে দলটির নেতারা যে বাস রিজার্ভ করেছিলেন সেই টাকা তাদের ডেকে ডেকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে বলেও বিভিন্ন মারফতে জানতে পারলাম। যদিও এ বিষয়টি নিয়ে খুব একটা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে না। 

ইতোমধ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ বিএনপি কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে এমন একটা ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে। জানিনা ঘটনাটা কতটুকু সত্যি। যদি সত্যি হয়ে থাকে বলে গণপরিবহন বন্ধ এবং পুলিশের এই অভিযানের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে বিএনপির এমন অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া যায় না।

ইউরোপে শীতের প্রকোপ শুরু হয়েছে। মানুষ ধীরে ধীরে ঘরবন্দী হয়ে পড়বেন। তবে এই শীতের প্রাক্কালেই ব্রিটেনে ঘটেছে এক বড় ঘটনা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস বিরোধী শিবিরের সমালোচনা সামলাতে না পেরে পদত্যাগ করেছেন। মাত্র ৪৫ দিন আগেই তিনি ক্ষমতায় বসেছিলেন। কিন্তু বিশ্বের প্রাচীন গণতান্ত্রিক এই দেশে বিরোধী শিবিরের প্রতিবাদের মুখে তিনি সরে দাঁড়ালেন। তিনি চাইলে হয়তো থেকে যেতে পারতেন। কিন্তু থাকেননি। এর আগে তার পূর্বসূরী বরিস জনসনও পদত্যাগ করেন। 

কিছুদিন আগে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেলেন। বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এলো ব্রিটেন। মিডিয়ায় রাণীর মৃত্যুর সংবাদ নানা মাত্রিকতা পায়। শোক দিবস ঘোষণা করা হয় আমাদের দেশেও। শত হোক গ্রেট ব্রিটেনের রাণী বলে কথা। তার শেষকৃত্যকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্ব এক সারিতে দাঁড়িয়ে যায়। সেখানে বাংলদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। 

ব্রিটেন একই বছরে দুই জন প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে। তবে বিগত দেড় দশক ধরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজনই। দেশের নানা পরিস্থিতি, নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার পরও তিনিই আমাদের সরকার প্রধান। দুই দুটি নির্বাচন যেন তেন ভাবে করেও তিনিই রয়ে গেছেন বীরদর্পে। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। 

সম্প্রতি দেশের আলোচিত ঘটনার মধ্যে তথ্য সচিবের বাধ্যতামূলক অবসরের ঘটনা। তারপর পুলিশের তিন উর্ধতন কর্মকর্তাকেও একই পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে কানাঘুষা উঠছে সরকারের না হয়ে রাষ্ট্রের হয়ে দায়িত্ব পালন করতে যাওয়ায় হয়তো তাদের এ পরিণতি। হয়তো বিষয়টি তারা বুঝতে পারেনি। যেমনটি বুঝতে পেরেছিলেন খুলনার ওই শিক্ষকরা। তাইতো তারা রাস্তায় নেমে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে। শেষপর্যন্ত সেখানে তাকে মেয়রও বানিয়েছেন। 

রাষ্ট্রের মধ্যে সরকারের লোক বেশি, কিন্তু রাষ্ট্রের লোক কম। যারা ছিলেন শোনা যায় তারাও সরকারের হয়ে যাবে, হতে বাধ্য হবে। কেননা এই লোকগুলো সরকারের হয়ে গেলেই লিজ ট্রাসের মতো  আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ কিংবা সরে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা কোনোদিনও ঘটবে না। যেমনটি ঘটেনি এই পনেরো বছরে। তাইতো খুলনার জনসভা বাধাগ্রস্থ করতে গণপরিবহন বন্ধ কিংবা বিএনপি নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি সেই বিষয়টিরই ইঙ্গিত দেয়। 

ফেসবুকে কেউ কেউ আকারে ইঙ্গিতে বিষয়টি বলতে চান। কিন্তু সেগুলো খুবই নিরীহভাবে। এই নিরীহভাবে বললে হয়তো লিজ ট্রাসদের ইগো কিংবা আত্মসম্মানে লাগে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো দেশগুলোর নেতাদের কাছে এগুলো কেনো প্রভাব ফেলে না। প্রভাব ফেললে এতোদিনে এদেশের অনেক কিছুই হতো। মানুষের নানাবিধ উন্নয়ন হতো। গালগল্পে নয় বাংলাদেশ উন্নত হতে পারতো সত্যিকারভাবে।  
 

শেয়ার করুন: