বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

ঢাকার বাতাসে ছাতিমের গন্ধ ভাসে 

মেসবাহ শিমুল

আপডেট: ১২:৪১, ১৫ অক্টোবর ২০২২

ঢাকার বাতাসে ছাতিমের গন্ধ ভাসে 

ফাইল ছবি

গেল ক’দিন ধরে ঢাকার বাতাসে ছাতিমের সুতীব্র ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে। শৈশবে বাড়ির অদূরে একটা বিশাল গাছ ছিলো। প্রকৃতিতে শীতের আগামনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে এই ফুল ফুটতো গাছটিতে। থোকা থোকা সাদা সাদা ফুল। সন্ধ্যার পরে তার ঘ্রাণে পাগলপারা হয়ে যেতাম। জোসনার রাতগুলো রাস্তায় হেটে হেটে সেই ঘ্রাণ নিতাম বুক ভরে। সেই গাছটি আজ আর বেঁচে নেই। তবে এখনো ঢাকা কিংবা অন্য কোথাও থেকে এই ঘ্রাণ নাকে এলে সেই গাছটির কথা ভীষণ মনে পড়ে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে মোটরসাইকেলে করে শিল্পকলার পাশ ঘেঁষে কাকরাইল হয়ে রমনার পাশ দিয়ে শাহবাগ, টিএসসি-শহীদ মিনার হয়ে শিক্ষাভবন সচিবালয়-প্রেসক্লাব হয়ে ফের সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বাগানে এসেছি। পথে বিভিন্ন যায়গায় ছাতিমের তীব্র ঘ্রাণ নাকে এসেছে। বুক ভরে নি:শ্বাস নিয়েছি। পরিবেশ-প্রকৃতি দেখে মনে হয়েছে শীত চলে আসতে আর বেশি দেরি নেই। সামনে নভেম্বর তারপর ডিসেম্বর মাস। 

ঢাকার প্রকৃতিতে শীতের আগমন ঘটছে। চারিদিক ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যাবে। তবে উত্তপ্ত হবে রাজনীতির মাঠ। কেননা বিএনপি ইতোমধ্যে সারাদেশে নাড়া দিয়েছে। তারা বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করেছে। সর্বশেষ সমাবেশ হবে ১০ ডিসেম্বর, ঢাকায়। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাকি দেশের রাজনীতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে এমনটাই ঘোষণা বিএনপি নেতাদের। তারা বলছেন- বেগম খালেদা জিয়ার হুকুমে দেশ চলবে। এবং দলটির নেতারা সেটি বেশ জোরালো এবং বারবার বলছেন।

বিএনপির এই ঘোষণা যখন রাজনৈতিক মহলে কৌতুহল কিংবা আলোচনার জন্ম দিয়েছে ঠিক সেই সময়ে সে পালে হাওয়া দিলো গাইবান্ধার উপনির্বাচন। এই নির্বাচনে অনিয়মের কারনে সেটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে নির্বাচন কমিশন। দেশের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। ইভিএমে নেওয়া এই ভোট বাতিল করে ইসি আসলে কী বার্তা দিলো তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অবশ্য ইসির এই সিদ্ধান্তে সরকার হতবাক হয়েছে। এমনকি বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছে ইসি-আওয়ামী লীগ। 

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইসি-আওয়ামী লীগ সম্পর্কের রসায়নটা সবার কমবেশি জানা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেও যে ইসি গঠিত হয়েছে তার সঙ্গেও পূর্বের ইসির মিল রয়েছে। সরকারী দলের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ি ১৫০ টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণেও ইসি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় ইসি কেন গাইবান্ধার নির্বাচন স্থগিত করলো সেটি নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। এই কৌতুহল আরো বেড়ে গেছে বিএনপির জোরালো আন্দোলন দেখে। অনেকে বলছেন, সরকার তার নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই সরে কিংবা পড়ে যাবে। তবে কোন পন্থায়- সেটি কেউই বলছেন না।   

ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায়ও চলছে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা কথা-বার্তা। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কূটনীতিকরা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাইছেন সেই বার্তা ইতোমধ্যেই সরকারকে দিয়েছেন। যদিও সরকার সেটি আমলে নিচ্ছেন না বলে বলতে চাইছেন। সরকারের দাবি- একটি দেশের একজন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বের সীমা জানা থাকা দরকার। কোনো মতেই উচিত নয় সেই সীমা অতিক্রম করার। এটি তাদের উপরের কথা। বাস্তবতা হলো সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীও যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করছেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যেমনটি বলেছেন, কোনো দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কূটনীতিক কিংবা প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের সময় যদি তারা আমাদের নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো কিছু জানতে চান তবে সেটিতো সরাসরি নাকচ করা যায় না।

কথায় কথায় তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনকেও বিদেশীরা গ্রহণযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এসময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন তাহলে কি আগামী নির্বাচনও ২০১৪ সালের মতো হচ্ছে? এমন প্রশ্নে ধাক্কা খান তিনি। হেসে বলেন, আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিমন্ত্রী। নির্বাচনের সামগ্রিক প্রশ্ন যদি আমাকে করেন সেটি বোধ হয় ঠিক হবে না।  

লেখক: ঢাকা অফিস প্রধান, নবযুগ।

শেয়ার করুন: