মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

সেপ্টেম্বর আসলেই দেখা মেলে ‘পরিযায়ী’ সাংবাদিকদের

হাবিব রহমান

আপডেট: ১২:২৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

সেপ্টেম্বর আসলেই দেখা মেলে ‘পরিযায়ী’ সাংবাদিকদের

প্রতিকী ছবি

নিউইয়র্কের বন্ধু সাংবাদিক  সনজীবন সরকার চমৎকার একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার ফেসবুকে। অল্প কয়েক লাইনের লেখা। তারপরও কয়েকবার পড়লাম। পড়তে পড়তে থামলাম, হাসলাম, ভাবলাম, আবার পড়লাম। সাংবাদিকদের একটা নতুন সজ্ঞা দিয়েছেন তিনি। ‘পরিযায়ী সাংবাদিক’। হাঃ হাঃ - হিঃ হিঃ। এর আগে হলুদ সাংবাদিক, হলুদ সাংবাদিকতার কথা শুনেছি। সাংঘাতিক, আন্ডারগ্রাউন্ড সাংবাদিক, চাঁদাবাজ সাংবাদিক, সন্ত্রাসী সাংবাদিক, সিন্ডিকেট সাংবাদিক, রাজনৈতিক সাংবাদিক, ভাড়াটে সাংবাদিকসহ সাংবাদিকদের অনেক উপাধির সাথে পরিচিত।

কিন্তু তাই বলে-‘পরিযায়ী সাংবাদিক’! তবে যে যাই বলুক আমার কিন্তু এই নামকরণটা দারুণ পছন্দ হয়েছে! একেবারেই নতুন, টাটকা এবং আনকোড়া। বলা যায় ডাইরেক্ট ফ্যাক্টরি থেকে আমদানী। তার এই ফেসবুক স্ট্যাটাসটা আপনাদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলামনা। দেখুন তাহলেঃ- “নিউইয়র্কে সারা বছর যাদেরকে সাংবাদিকতার পেশায় দেখা যায় না, তাদের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বা বাংলাদেশ সোসাইটি নির্বাচনের সময় গলায় ‘প্রেস কার্ড’ ঝুলিয়ে বীরদর্পে ঘুরতে দেখা যায়। এরা আবার নিউইয়র্কের প্রেস ক্লাবগুলোরও (!) সদস্য।’

 প্রেসক্লাবের নির্বাচন এবং সেপ্টেম্বরে এদেরকে দেখা যায় বলে আমি এদেরকে ‘পরিযায়ী’ সাংবাদিক বলি।

পরিযায়ী পাখি কাকে বলে : পাখি পরিযান বলতে নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু পাখির প্রতি বছর বা কয়েক বছর পর পর একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে বা সময়ে কম করে দু’টি অঞ্চলের মধ্যে আসা-যাওয়াকেই বোঝায়।

মন্তব্য : বাঙালির বুদ্ধি বেশি, আক্কেল কম। ধন্যবাদ সনজীবন কুমার। সত্য কথাটি স্পষ্ট করে বলার জন্য।

নিউইয়র্কে অনেককেই বলতে শুনি-এখানে নাপিতকেও ট্রেনিং করে লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু সাংবাদিক হতে গেলে কোন কিছুই লাগে না। কথাটি কি একেবারেই মিথ্যা?

সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। পেশা হিসেবে সংবেদনশীলতা সাংবাদিকতাকে অন্য সকল পেশা থেকে আলাদা করেছে। সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির দর্পণ স্বরূপ। সাংবাদিকতা যেমনি মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করে তেমনি এর একটি ভুলসমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আনতে পারে চরম দুর্ভোগ।

যে কারো হাতে ছুরি কাঁচি তুলে দিয়ে যেমন সার্জন বানিয়ে দেয়া যায়না তেমনি যে কারো হাতে পরিচয় পত্র, কলম, ক্যামেরা বোম তুলে দিয়েও সাংবাদিক বানানো যায় না।

সাংবাদিকতা শাস্ত্রের প-িতগণ মনে করেন, একজন পেশাদার সাংবাদিককে অবশ্যই সংবাদ সংগ্রহ, লিখন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে যেমন দক্ষতা প্রদর্শন করতে হয়, তেমনি মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের সুষ্ঠু প্রয়োগও অপরিহার্য। আর এগুলোর ঘাটতি থাকলে সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য নষ্ট হয়ে যায়।

গত কয়েকদিন আগে জ্যাকসন হাইটসের একটি ডিজাইন শপে বসে আমার কিছু ব্যবসায়িক কাজের ডিজাইন করছিলাম। এমন সময় সেখানে একজন মহিলা আসলেন। আমাকে দেখে সালাম দিয়ে বললেন - হাবিব ভাই দোয়া করবেন। আমি একটি টিভি খুলছি।

মহিলা কমিউনিটির মোটামুটি পরিচিত মুখ। মাঝে মাঝে মেলা টেলা করেন। তিনি এবার নতুন প্রজেক্টে হাত দিয়েছেন-টেলিভিশন!

আমাদের কমিউনিটিতে এখন অনেক টেলিভিশন। টেলিভিশন বলছি এই অর্থে যে পুরো টেলিভিশন কথাটিই আছে নামকরণে। আমার প্রতিবেশী মসজিদের একজন বাংলাদেশি ইমাম। তার নাম দিয়েই পুরো টেলিভিশনটির নামকরণ। কিন্তু তার এই টেলিভিশনের কি কাজ? মাঝে মাঝে অদক্ষ হাতে জুমার খোতবা লাইভ করেন। এরকম অনেক অনেক টেলিভিশন আছে আমাদের কমিউনিটিতে।

ফেসবুকে  একটা একাউন্ট অথবা ইউটিউবে একটা চ্যানেল, হাতে একটি স্মার্টফোন, একটি মাইকেরোফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ। হয়ে গেলো একটা টিভি।

তারপর ‘হ্যালো ভিউয়ার্স’।

এরা  হানা দেয়া রেস্টুরেন্টে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। ভুল শুদ্ধ মিলিয়ে যা মুখে আসে বলে গেলো কিছু সময়। লাইভ রিপোর্টিং। এরা প্রমোট করে ব্যবসায়ীদের।

কি দিয়ে ভাত খাচ্ছে। বাসা মুভ করছে, ছেলের খতনা, মেয়ের গায়ে হলুদ, পিকনিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে এরা হাজির। এক একটা টেলিভিশনের কি গালভরা নাম! এরা টক শোও করে। মানসম্মত কনটেন্ট, ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার যোগ্যতা, আকর্ষণীয় উপস্থাপনা দিয়ে দর্শক শ্রোতাকে ধরে রাখার কোনো চেষ্টা কারো মধ্যে আছে কি? এখন অনেক অন লাইন পোর্টাল বা আইপি টিভির সংবাদের ভাষা আর কনটেন্ট দেখলে মনে হতে পারে সাংবাদিকতা বুঝি অশিক্ষিত লোকের পেশায় পরিণত হয়েছে।

এখন লাইভের নামে একটা অসুস্থ সাংবাদিকতা শুরু হয়েছে। বলা যায় লাইভের নামে লাইফটাই অস্থির। এই সাংবাদিকতার নেই কোন গ্রামার, কোন এথিক্স বা নীতিমালা। অথচ সাংবাদিকতা একটি গ্রামারের মধ্যে করতে হয়। সাংবাদিকতার ডিগ্রি থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই। তবে তার শেখার ইচ্ছা এবং পেশার প্রতি গভীর আগ্রহ ও শ্রদ্ধা থাকতে হবে। একজন পেশাদার সাংবাদিক হতে হলে কলম পিষতে হয় বহু বছর, বুম আর ক্যামেরা  নিয়ে দৌড়াতে হয় বহুদিন। কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। সাংবাদিকতার কোন শর্টকাট রাস্তা নেই।

এ রকম টিভি এখন অনেক নিউইয়র্কে। ব্যাঙের ছাতার মতো আরো গজাচ্ছে।

শুধু কি টিভি? সংবাদপত্রও।

অফিস নেই, কর্মী নেই, সাপোর্টিং স্টাফ নেই, নিজের সাংবদিকতার কোন অতীত অভিজ্ঞতা নেই। তারপরেও তিনি এডিটর। মাঝে পত্রিকা বের করেন। পকেটে সুন্দর আইডি। প্রয়োজন মত, প্রয়োজনীয় স্থানে তা উপস্থাপন করেন। ঢাকার খ্যাত-অখ্যাত গণমাধ্যমের আইড ঝুলিয়ে ফোবানা বা বড় বড় অনুষ্ঠানে ‘খ্যাপ’ মারেন। যাদের অধিকাংশই কিনা ঢাকার মিডিয়া কাছ থেকে কানাকড়িও পান না। সারাদিন অন্য কাজ করে সন্ধ্যা বা অনুষ্ঠান বুঝে তারা হাজির। এবার নানা বায়না ধরে অনুষ্ঠান আয়োজকদের কাছে। ঢাকার যেসব গণমাধ্যমের আইডি ঝুলিয়ে অনেকেই সাংবাদিক পরিচয় দেন সেসব গণমাধ্যম বাংলাদেশেও দৈন্যদশায় আছে। আর সেপ্টেম্বর আসলেতো কথা নেই। তারা এমন ভাব করেন যেন সারা বছর সাংবাদিকতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। কমিউনিটির অধিকাংশ মানুষ এসব দেখে হাসাহাসি করেন। তবে কিছু কিছু লোক আছেন তারা আবার এসব সাংবাদিক নামধারী পার্টটাইমরাদের কিছু হাতে গুজেও দেন। দেখা যায় ঢাকার কিছু গণামাধ্যমের কার্ডধারীরা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যেও যাচ্ছেন অনুষ্ঠান কাভার করতে। কিন্ত তারা কি সংশ্লিষ্ট মিডিয়াগুলোর কাছ থেকে এর জন্য কোনো সম্মানি বা যাতায়ত খরচ পেয়ে থাকেন? সোজাসোজি উত্তর, না। তাহলে তারা যাচ্ছে কি করে? পাঠক আপনারা তা বুঝে নিয়েন।

সাংবাদিক বা গণমাধ্যম কর্মী হতে হলে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলনের কোল বিকল্প নেই। প্রতিটি পেশাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক। প্রতিটি পেশার নিজস্ব কিছু নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান, পেশাগত আচরণবিধি, আলাদা বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা আছে। সাংবাদিকতাও এর বাইরে কিছু নয়। বর্তমান যুগ অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগ। ইন্টারনেটের বদৌলতে অনলাইন, ডিজিটালাইজেশন, আইসিটি এ সময়ের চরম বাস্তবতা। আপনি সোস্যাল মিডিয়ায়, ব্লগ সাইটে লিখুন, কথা বলুন, ডিভাইস ব্যবহার করে ছবি তুলুন, ভিডিও আপলোড করুন। সমস্যা নেই। এটা আপনার বাক স্বাধীনতা। ফা-ামেন্টাল রাইটস। কিন্তু সাংবাদিক না হয়ে নিজেকে সাংবাদিক দাবী করছেন কেন? বরঞ্চ আপনি নিজেকে লেখক, ব্লগার, অনলাইন সোস্যাল এক্টিভিস্ট বা আলোকচিত্রী পরিচয়ে অভিষিক্ত করুন। অনেক অনেক সম্মান বয়ে আনবে।

নিউইয়র্কে প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিলিয়ে কতগুলো মিডিয়া? তাতে ক’জন সাংবাদিক কর্মরত? ফোবানা, সোসাইটি বা জালালাবাদের নির্বাচন বা সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কভার করতে যারা গলায় কার্ড ঝুলিয়ে প্রথম সারির আসনগুলো দখল করে থাকেন তাদের কতজন পেশাদার! তাদের কতজন অনুষ্ঠানের খবর রিপোর্ট করেন? এগুলি কোন পত্রিকা বা টিভিতে প্রচারিত হয় কেউ কি কার হদিশ রাখেন?

সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী এলে যাঁদের আইডি পেতে জাতিসংঘ মিশন সহায়তা করেন, যাদের জন্য প্রকৃত সাংবাদিকরা বসতে পর্যন্ত পারেন না অনেক অনুষ্ঠানে। যাদের সাংবাদিক হবার ন্যুনতম যোগ্যতা নেই তারা যখন সাংবাদিক হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেয় তখন প্রকৃত সাংবাদিকরা লজ্জিত হন। সাধারণ মানুষ তখন ভুয়া আর ভুঁই ফোঁড় সাংবাদিকদের সাথে প্রকৃত সাংবাদিকদের গুলিয়ে ফেলেন। গণমাধ্যমের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা, অবিশ্বাস ও অশ্রদ্ধা তৈরি হয়। তাদের চিহ্নিত করা কি খুবই কঠিন কাজ? দয়া করে এই কাজগুলি আপনারা করুন। তাহলে একদিকে সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের আস্থা যেমন বাড়বে তেমনি পেশাদার সাংবাদিকরা বিব্রতকর অবস্থা থেকে রেহাই পাবেন।

প্রকৃত সাংবাদিকদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং গনমাধ্যমের পরিপূর্ণ পেশাদারিত্ব গড়ে তুলতে সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে সহায়তা করবেন এই প্রত্যাশা আমাদের।

আমার বলতে দ্বিধা নেই ডিজিটালাইজেশন সাংবাদিকতার চিরচেনা জগতকে বদলে দিচ্ছে। তৈরি করছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। স্মার্ট ফোন জার্নালিজম, সিটিজেন জার্নালিজম, রোবট সাংবাদিকতা, অটোমেটেড সাংবাদিকতা, বহুমাধ্যম কেন্দ্রিক জার্নালিজম ইত্যাদি নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করছে। সাংবাদিকতা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। এসেছে নতুন নতুন সফ্টওয়ার। কনভারজেন্স টেকনোলজি, ওয়ার্ডস্মিথ সফটওয়্যার, কুইল প্রযুক্তি, পারস্পেকটিভ এপিআইটুল, স্বয়ংক্রিয় ভিডিও কনটেন্ট সহবিভিন্ন প্রযুক্তি সাংবাদিকতাকে অনেক আধুনিক করেছে।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে প্লাটফর্ম পরিবর্তন হচ্ছে। প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক (সাউন্ড ও মোশন) আর এখন অনলাইন মিডিয়া। এভাবে সময়ে সময়ে রূপের পরিবর্তন হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বাহনের চিত্র পাল্টাচ্ছে। কিন্তু সাংবাদিকতার মৌলিকত্ববা বিশেষত্ব হারিয়ে যায়নি। যে মিডিয়া বা যে ধরনের গণমাধ্যমে কাজ করেন না কেন, সাংবাদিকতার বুনিয়াদি মৌলনীতি সকল জায়গায় সকল সময়ে এক ও অভিন্ন। সাংবাদিকতার পাঠ ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্মে উপস্থাপনা, কলা কৌশল ও রচনারীতিতে কিছুটা বৈসাদৃশ্য থাকলেও মূল বিষয় তথা সাংবাদিকতার মৌলিক ধারণার ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই।

আগে সাংবাদিকদের নিয়ে গর্ব করা হতো। মিডিয়া ছিলো হাতে হোনা। আর এখন? প্রযুক্তির কল্যাণে সবার হাতে হাতে টিভি আর ঘরে ঘরে সাংবাদিক। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। পত্রিকার মানের দিকে যেমন কারো খেয়াল নেই। তেমনি সাংবাদিক বাছাইয়েও  কোন তাগিদ নেই। কি দুর্ভাগ্য আমাদের!

সংশোধনের জন্য আত্মসমালোচনা একান্ত আবশ্যক। নিজ পেশার হতশ্রী অবস্থা নিয়ে লিখতে হলো বলে দুঃখিত। আবারো বলছি এ লেখায় কেউ ব্যথিত হলে ক্ষমা করবেন। আমি চাই সাংবাদিকতা পেশা সৎ এবং মহান  পেশার চেহারা নিয়ে আমাদের কাছে বেঁচে থাকুক। সাংবাদিকতার মর্যাদা ভুলুন্ঠিত না হোক। এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক এবং সিইও বাংলা ট্যুর।

০০০

ট্রাম্প পরিবারের

বিরুদ্ধে জালিয়াতির

মামলা

নবযুগ রিপোর্ট

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার তিন সন্তানের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তারা ঋণ পেতে এবং হ্রাসকৃত হারে কর দিতে তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান দি ট্রাম্প অর্গ্যানাইজেশনের রিয়েল এস্টেটের মূল্য কম দেখিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনজীবীরা বলেন, ট্রাম্প অর্গ্যানাইজেশন ২০১১-২১ সময়কালে জালিয়াতিপূর্ণ অসংখ্য কাজ করেছে। তবে ট্রাম্প এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটা ¯্রফে আরেকটি ‘বলির পাঁঠা’ বানানোর চেষ্টা।

আদালতে দায়ের করা অভিযোগে সাবেক প্রেসিডেন্টের বড় ছেলে ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভানকা ও এরিক ট্রাম্পকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ট্রাম্প অর্গ্যানাইজেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালেন ওয়েসেলবার্গ ও জেফরি ম্যাককনিকেও আসামি করা হয়েছে।

তিন বছর অনুসন্ধানের পর মামলাটি দায়ের করেছেন নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লতিশিয়া জেমস। তিনি রাজ্যের সবচেয়ে সিনিয়র আইনজীবী।

এক বিবৃতিতে জেমস বলেন, ‘সন্তান এবং ট্রাম্প অর্গ্যানাইজেশনের সিনিয়র নির্বাহীদের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্যায়ভাবে তার নিট সম্পদের পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি সিস্টেমের সাথে প্রতারণা করেছেন।’

তিনি বলেন, ট্রাম্পের নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্ট ট্রাম্প টাওয়ারের মূল্য ৩২৭ মিলিয়ন ডলার। তিনি এর যথাযথ মূল্য প্রদর্শন করেননি।

অ্যাটর্নি জেনারেল চাচ্ছেন, নিউইয়র্কের কোনো ধরনের ব্যবসায় ট্রাম্প বা তার সন্তানরা যেন অফিসার বা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন। তাছাড়া ট্রাম্প অর্গ্যানাইজেশনকে পাঁচ বছরের জন্য রিয়েল এস্টেট লেনদেন থেকে বিরত রাখার নির্দেশও আদালত থেকে চাইছেন লতিশিয়া জেমস।

লতিশিয়া জেমস বিষয়টি আপস-রফার মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছিলেন। তা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই তিনি আইনের আশ্রয় গ্রহণ করলেন।

উল্লেখ্য, ডেমোক্র্যাট পার্টির সদস্য লতিশিয়া জেমস আগামী নভেম্বরে পুনঃনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অন্যদিকে নিজের ট্রুথ সোস্যাল সাইটে জেমসকে কৃষ্ণাঙ্গ ও বর্ণবাদী হিসেবে অভিহিত করেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, তার ওপর অন্যায়ভাবে অভিযোগ আরোপ করা হচ্ছে, তাকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে।

ট্রাম্প আগেও অভিযোগ করেছিলেন যে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য লতিশিয়া জেমস তার বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছেন।

ট্রাম্প নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট না দিলেও তিনি রিপাবলিকান পার্টিতে প্রভাব বিস্তার করে রয়েছেন। তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

শেয়ার করুন: