বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়কের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি

শামসুদ্দীন আজাদ, সহ-সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৫ আগস্ট ২০২২

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়কের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়কের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি

বিএনপি তার মিত্ররা নতুন করে দাবী তুলছে দেশে আবার নতুন করে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে এবং ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তাহলে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, না হয় তারা করবে না। তাদের এই দাবী এখন ঢাকার গুলশান বারিধারার কুটনীতিক পাড়ার বিদেশী দূতাবাসের পিয়ন দারোয়ান থেকে রাষ্ট্রদূতের টেবিল পর্যন্ত পৌঁছেছে।

বিএনপির এই দাবীকে আগ বাড়িয়ে কুটনীতিকদের কাছে হালাল করার জন্য অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে দিনারত কাজ করে যাচ্ছেন কুটনীতিকদের পেইড এজেন্ট . বদিউল আলম মজুমদার, . শাহদীন মালীক, . আসিফ নজরুল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শারমিন সোনিয়া মুর্শিদ। অতি সম্প্রতি এই জন মেহমানকে দাওয়াত দিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার বাস ভবনে। এমন দেশ বিরোধী তৎপরতা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। যখন বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় আসে এসব নীতিভ্রষ্টদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়।

এদের তখন দেশপ্রেম, গণতন্ত্রের প্রতি ভালবাসা এত বেশী বেড়ে যায়, বলতে গেলে তারা দেশ নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুম হারাম করে ফেলে। তাদের ভাবনাটা কবি গুরুর জুতা আবিস্কারের কাহিনীকে স্বরণ করিয়ে দেয়। জুতা আবিস্কারের কাহিনীতে কবি বুঝালেন- রাজা চাইলেন পুরো রাজ্যকে ধুলা মুক্ত করতে হবে, মন্ত্রী, পাইক পেয়াদাকে নির্দেশ দিলেন যেভাবে হোক তোমরা আমার রাজ্যকে ধুলা মুক্ত কর। যেই কথা সেই কাজ, সারা রাজ্যে ঝাড়দেয়া শুরু করল কিন্তু ধুলা দূর করতে গিয়ে সারা রাজ্য ধুলায় ভরিয়ে দিল, জনজীবনকে অতিষ্ট করে তুললো ধুলায়।

এবার রাজা ক্ষেপে গিয়ে বললো-ধুলা করিতে দূর, রাজ্য হলো ধুলায় ভরপুর। এবার ধুলা পরিস্কার করার নির্দেশ দিল রাজা, শুরু হলো সারা রাজ্যব্যাপী পানি ছিটানো। এবার পুরো রাজ্য কাঁদায় ভরে গেল, শুরু হল আরো মহা সংকট। রাজা এবারও ক্ষেপে গিয়ে বললেন- রাজ্যের সব মূর্খের দল তোদের দিয়ে কিছুই হবে না। সামান্য ধুলা কিভাবে দূর করতে হবে, পায়ে যাতে কাঁদা না লাগে সেই চিন্তা করার ক্ষমতা তোদের নেই। রাজা ক্ষোভের সাথে নির্দেশ দিলেন মুচিকে ডেকে তার কাছে কোন সমাধান আছে কিনা জানতে চাইলেন। মুচি বেটা রাজ দরবারে সভাসদের সামনে এসে বিনয়ের সাথে বলল রাজার পা দুটা যদি পাদুকা যা জুতা দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে রাজার দুপা ধুলা মুক্ত থাকবে। মুচির এমন কথা শুনে পাইক পেয়াদা বলে উঠলো, এই কথা তো আমারও ছিল মনে-ওই মুচি বেটা জানলো কি করে? শুরু হয়ে যায় হাসি আর তিরস্কারের রোল।

নির্বাচনের সময় এলে বাংলাদেশের এসব দালালগুলোর দৌঁড় ঝাপ বেড়ে যায়। বিদেশীদের কথা শুনে এদেশকে আরেকটি নৈরাজ্যকর অবস্থায় ফিরে নেয়ার জন্য। বিএনপির শীর্ষ নেতা মা ছেলে দুজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী, দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাদের - দিয়েছে সুতরাং তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য। সুতরাং পাঠক বুঝতেই পারছেন দলের শীর্ষ দুই নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তাদের নির্বাচনে জেতার বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ হবে অর্থহীন। নেতাবিহীন নির্বাচনে মানুষ তো বিএনপিকে ভোট দেবে না। তাছাড়া এই দলের অনেক নেতাও সন্ত্রাস আর দেশবিরোধী অপকর্মে লিপ্ত থাকার দায়ে অভিযুক্ত, আদালতে তাদের মামলাগুলোও বিচারাধীন। এমতাবস্থায় তারা নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে তারা নতুন নতুন ফাঁদ তৈরি করছে তারই অংশ হিসেবে সরকারের পদত্যাগ দাবী করছে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না মর্মে প্রচারণা চালাচ্ছে।

আর এই দাবীর পক্ষে সমর্থন পেতে কুটনীতিকদের পদ লেহন করছে বিএনপি তার ঐসব কুশিলবরা মিলে মিশে। যদি সরকার পদত্যাগ করে তাহলে বিএনপি জামাত মিলে মিশে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে জঙ্গী, তালেবানী সন্ত্রাসীদেরকে আফগানিস্তান পাকিস্তান থেকে ভাড়া করে এনে এই দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাস, গুলি, বোমাবাজি, মানুষ হত্যা, জায়গা জমি দখল, মানুষের ধনসম্পদ লুটপাট, নারিদের ধর্ষণ। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার প্রতিশোধ নিতে যা যা করা দরকার তাই করবে। দেশের কোন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব থাকবে না, দেশ পরিণত হবে একটি সন্ত্রাসের জনপদ। আইন আদালত কোন কিছু তারা মানবে না, এমনকি লুটপাট করে নিয়ে যাবে দেশের ব্যাংকগুলোর গচ্ছিত অর্থও। অর্থাৎ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারলে তারা এমন নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এদেশ দখল করবে। নিজেদের পছন্দমত নির্বাচন কমিশন বানাবে। প্রশাসনকে দলীয়করণ, জামাত-বিএনপির ক্যাডারদের অবস্থান নিশ্চিত করে ২০০১ সালের আদলে অথবা ১৫ই ফেব্রুয়ারির আদলে নির্বাচন করে দেশটা দখল করার পরিকল্পনা করছে।

২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি কিন্তু তারা সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল নির্বাচন করতে দেবে না। সরকার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সারা দেশের জনগণ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়। সারা দেশব্যাপী বিএনপি সন্ত্রাস করেছিল ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা দিয়েছিল। ভয়-ভীতি প্রদর্শনের জন্য বোমাবাজি করেছে ভোট কেন্দ্রের আশে পাশে, নির্বাচন কমিশন যখন নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাচ্ছিল তখন ওইসব যানবাহনে সন্ত্রাস চালিয়ে বোমা মেরে ব্যালট পেপার, স্বচ্ছ ব্যালট বক্স, ভোটার তালিকাসহ সমস্ত দরকারি কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয় অথবা কেড়ে নিয়ে যায়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সাধারণত নির্বাচন কমিশন ব্যাবহার করে ভোট কেন্দ্র হিসেবে সেই নির্বাচনী বুথ কেন্দ্রগুলিতে আগুন লাগিয়ে ২৫০টি প্রাইমারি স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছিল বিএনপির সন্ত্রাসীরা, শুধু তাই নয় কয়েকজন প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিং অফিসার পুলিং এজেন্টকে গুলি করে হত্যা করেছিল।

এভাবে বিএনপি নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছিল ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিহতের নামে। কিছুই তো করতে পারেনি নির্বাচন যথারীতি সম্পন্ন হয়েছে, সরকার ক্ষমতায় এসেছে এবং যথারীতি তার মেয়াদও পূর্ণ করেছে। আবারও যখন ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এল ঠিক একই সুরে সুর তুলে দেশে সহিংসতা তৈরি করতে চেয়েছিল। এবারের মত তাদের মুরুব্বিদের কাছে গিয়েছিল, এমনকি ইন্ডিয়াতে গিয়ে বিজেপির নেতাদের হাতে পায়ে ধরেছিল। যেকোন মূল্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে বিএনপিকে যেন ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হয়। এসব কাহিনী তো আমরা ভুলে যাইনি। শেষ পর্যন্ত যখন ভারতে মোদী সরকার ক্ষমতায় এলো আনন্দে, খুশিতে রাজপথে মিছিল করেছিল বাংলাদেশে সরকার পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এরপরও বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে সারা দেশে ৬টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। ভোটের দিন সকাল থেকে নির্বিঘেœ ভোট চলছিল মির্জা ফখরুল সাহেবও ভোট দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলছিলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে এভাবে চললে আপত্তি নেই। কিন্তু ফলাফলে যখন দেখা গেল সারা দেশের মানুষ বিএনপিকে তার বিরামহীন সন্ত্রাসের কারণে প্রত্যাখ্যান করেছে। তখন সাথে সাথে মির্জা ফখরুল ভোল পাল্টিয়ে বলতে শুরু করলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আমরা এই ফলাফল মানি না। আর এদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রথম প্রবর্তক হচ্ছেন আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দাবীর প্রেক্ষিতেই এই দেশে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সাহাব উদ্দিনের অধীনে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন।

বিএনপি আজীবন ক্ষমতা থাকার জন্য এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে নষ্ট করে দেয়। ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুরকে ম্যানেজ করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আর ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নয়। ২০০৬ সালে নিজ দলীয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিনকে বানালেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান। জনগণের চাপের মুখে তিনি যখন সরে যেতে বাধ্য হন তখন সেনাবাহিনীকে দিয়ে ক্ষমতা দখল করার যে ব্যার্থ চেষ্টা করেছিলেন সেই ইতিহাস মানুষ কিভাবে ভুলে যাবে? আবার বিচারপতি কেএম হাসানকে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বানাতে বিচারপতিদের অবসরে যাওয়ার বয়সও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।

চিরদিন ক্ষমতায় থেকে মা পুত্রের দূর্নীতি আড়াল করতে শেষ পর্যন্ত সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার ক্ষমতায় এসে এদেশের গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থাকে গলা টিপে হত্যা করল বিএনপির কারণে।

শেয়ার করুন: