বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

সরকার-বিএনপি মুখোমুখি

উত্তপ্ত রাজনীতি, থমথমে ঢাকা 

নবযুগ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

উত্তপ্ত রাজনীতি, থমথমে ঢাকা 

নয়পাল্টনে পুলিশের হামলায় আহত বিএনপি কর্মীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতি। বিএনপির ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনীতির এ উত্তাপের আঁচ লেগেছে আন্তর্জাতিক বিশ্বেও। উদ্বেগ ও আর উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘসহ প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। সেইসঙ্গে ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা চলমান পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে শনিবারের সমাবেশ প্রতিরোধের ঘোষণা থাকলেও বিএনপি তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। ফলে থমথমে ঢাকার ওপরই এখন সবার দৃষ্টি। 

বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে বেশকিছুদিন যাবতই দেশের রাজনীতিতে আলোচনা চলছিলো। সবশেষ বুধবার দলটির নয়পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। পুলিশের গুলিতে দলটির এক কর্মী নিহত ও বহু আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া পুলিশের ৪৯ সদস্যও আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে পুলিশ বিনা উস্কানিতে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। অফিসে বোমা রেখে তাদের নামেই উল্টো মামলা দিয়েছে। এসব কিছুই শনিবারের সমাবেশ বানচালের জন্য সরকারের নির্দেশনা বলে মনে করছেন তারা। 

২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ড করা হয়েছে। এর আগে রাজনীতির মাঠ দখল নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, বিগত দুই নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এবারও সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। অন্যদিকে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ততোটা সুসংগঠিত না হলেও তৃণমূলে ব্যাপক জনমত গড়ে উঠেছে দলটির পক্ষে। ফলে রাজনীতিতে পরিবর্তনের পক্ষে গণমানুষের যে চাপ সেটিকে ধারণ করতে গেলে যে কোনো চ্যালেঞ্জই নিতে হবে দলটিকে। এছাড়া জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বও এখন অনেকটা বিএনপির পক্ষে। মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ৬ ডিসেম্বর ১৫ দেশ ও সংস্থার বিবৃতিতে সে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। ওই বিবৃতিতে দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। 

ঢাকার রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত প্রায় দেড় দশক ধরেই সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রাজনীতির মাঠ। এ সময়ের মধ্যে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অনেকটাই তছনছ করে দিতে সক্ষম হয়েছে তারা। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ব্যবহার করে তারা রাজনীতির মাঠের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপি আবার তার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসবে সেটি সরকার কোনাভাবেই মেনে নেবে না। যে কারণে দলটির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে নানা প্রতিবন্ধকতার পর এবার ঢাকায় তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। কেননা ইতোপূর্বে ২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচনের আগেও ঢাকার নিয়ন্ত্রণ ছিলো আওয়ামী লীগের হাতে। এবারও যে কোনো মূল্যে পূর্বের ধারাবাহিকতা রাখতে মরিয়া সরকার। 

ঢাকার প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটি সূত্রমতে, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা সরকারের সুরক্ষার জন্য ভারতের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষা দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরের বেশকিছু সদস্য ঢাকায় এসেছে। ঢাকার এক কর্মকর্তা নবযুগের সঙ্গে আলাপকালে জানান, গণভবন ঘেঁষা প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটি অফিসের কয়েকশ’ কর্মকর্তাকে খুব শিগগিরই অনত্র বদলি করে সেখানে ৩শ ভারতীয় কর্মকর্তা আউটসোর্সিং করা হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, রাজস্বখাতভুক্ত তাই চাকরি হয়তো যাবে না। কিন্তু আশঙ্কা করছি যেখানে আমাদের পাঠানো হবে সেখানে কোনো কাজ থাকবে না। তার মতে, দেশের সামগ্রিক অবস্থা যেখানে গিয়ে পৌঁছেছে সেখান থেকে আদৌ ফেরা সম্ভব নয়। ফেরানো গেলেও সেটি অনেক সময় সাপেক্ষ। 

এদিকে আগামীকালের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার পরিস্থিতি এখন বেশ থমথমে। সমাবেশের স্থান নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে দেন দরবার চলছিলো। নয়াপল্টনে অনড় বিএনপি শেষ পর্যন্ত কমলাপুর স্টেডিয়ামে গণসমাবেশ করতে রাজি হলেও সরকারের পক্ষ থেকে মিরপুর বাঙলা কলেজ প্রস্তাব করা হয়। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি। 

সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে পুলিশের তল্লাশি গেট বসানো হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় সরকারী দলের নেতাকর্মীদের কড়া অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নেতারা বিএনপি কর্মীদের হত্যার হুমকিও দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে রাজধানীর দারুসসালাম থানার এক নেতার এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সবমিলে ঢাকার থমথমে এই পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় মার্কিন দূতাবাস ও ব্রিটিশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের এ ধরণের কর্মকান্ডকে অতিরঞ্জিত হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। 
 

শেয়ার করুন: