বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত ৪৬, আহত ৭০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আপডেট: ২০:১৭, ২১ নভেম্বর ২০২২

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত ৪৬, আহত ৭০০

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত ৪৬, আহত ৭০০

ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা প্রদেশে মাঝারি মাত্রার এক ভূমিকম্পে ৪৬ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সোমবার রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে আরও কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন। এছাড়া এই প্রদেশের শত শত বাড়িঘর ধসে গেছে বলে জাভার এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তবে স্থানীয় অপর এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, পশ্চিম জাভায় ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় দুই ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন।

দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল মেট্রো টিভি বলেছে, সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১টা ২০মিনিটের দিকে পশ্চিম জাভায় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, পশ্চিম জাভার সিয়াঞ্জুর শহরের ১০ কিলোমিটার ভূগর্ভে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। সিয়াঞ্জুর শহরের স্থানীয় প্রশাসনের মুখপাত্র আদম এএফপিকে বলেছেন, ‘এখানে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন। শত শত এমনকি হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।’ জাভায় আঘাত হানা এই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে দেশটির সাবেক রাজধানী জাকার্তাও। পশ্চিম জাভার সিয়াঞ্জুর শহর ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল বলে সেখানকার সরকারি কর্মকর্তা হারমান সুহারম্যান জানিয়েছেন।

স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল কমপাস টিভিকে হারমান বলেছেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভূমিকম্পে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। অনেক এলাকা থেকে ভুক্তভোগীরা আসছেন। প্রায় ৭০০ জন আহত হয়েছেন। এর আগে, মেট্রো টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, কেবল একটি হাসপাতালেই এখন পর্যন্ত ২০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং আরও কমপক্ষে ৩০০ জনকে আহত অব্স্থায় উদ্ধারের পর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এটা কেবল একটি হাসপাতালের চিত্র। সিয়াঞ্জুরে আরও চারটি হাসপাতাল রয়েছে। ভূমিকম্পে ধসে পড়া ঘরবাড়ির নিচে এখনও অনেকে চাপা পড়ে আছেন। যে কারণে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন হারমান। চাপা পড়া লোকজনকে উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাভার এই কর্মকর্তা।

দক্ষিণ জাকার্তার বাসিন্দা ভিদি প্রিমাধানিয়া বলেছেন, শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আমার সহকর্মীরা এবং আমি জরুরি সিঁড়ি ব্যবহার করে নবম তলায় আমাদের অফিস থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা বলেছে, সিয়াঞ্জুরের বেশ কিছু বাড়িঘর এবং একটি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। মেট্রো টিভির ফুটেজে দেখা যায়, সিয়াঞ্জুরের কিছু ভবন একেবারে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কিছু বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে অনেক বাসিন্দা ধ্বংসস্তুপের নিচে তল্লাশি চালাচ্ছেন। দেশটির আবহাওয়া, জলবায়ু ও ভূপদার্থবিজ্ঞান সংস্থা (বিকেএমজি) বলেছে, সোমবার জাভায় যে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে তাতে সুনামির কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে ভূমিকম্প পরবর্তী আফটারশক অনুভূত হতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়েছে সংস্থাটি।

প্রশান্ত মহাসাগরের তথাকথিত ‘রিং অব ফায়ারে’ ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান হওয়ায় দেশটিতে প্রায়ই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা দেখা যায়। এখানে টেকটোনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষ ঘটে। শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, জাপানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশই এ কারণে ভূমিকম্পের অত্যধিক ঝুঁকিতে আছে। ২০০৯ সালে পাদাংয়ে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৬ মাত্রার এক ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেই সময় প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে এক হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং আহত হন আরও অনেকে। এছাড়া ভূমিকম্পে বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনাও ধ্বংস হয়ে যায়। ২০০৪ সালে সুমাত্রার উপকূলে ৯ দশমিক ১ মাত্রার মাত্রার ভয়াবহ একটি ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের পরপর আঘাত হানে সুনামি। তখন ওই অঞ্চলে ভূমিকম্প ও সুনামির কারণে ইন্দোনেশিয়ায় ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। সূত্র: রয়টার্স, মেট্রো টিভি।

শেয়ার করুন: